শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

বগুড়ায় 'গলার কাঁটা' অটোরিকশা-সিএনজি, যানজটে নাভিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৪ অক্টোবার ২০২৪ ১২:০৭ পি.এম

বগুড়ায় 'গলার কাঁটা' অটোরিকশা-সিএনজি, যানজটে নাভিশ্বাস ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শহরের ভয়াবহ যানজট নিয়ে দুর্ভোগ, ভোগান্তির যে করুণচিত্র ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে, তা কে না জানে। তবে ৫ আগস্টের পরে পরিবর্তিত বাংলাদেশে এই যানজট কী আকার ধারণ করেছে তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। রাজধানী ঢাকা শহরে যে ধরনের যানজট হয় তাকেও হার মানিয়েছে বগুড়ার যানজট, বলছেন বগুড়ার শহরবাসী। 

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের কাজে গতি কম এবং যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে তীব্র যানজট। শহরবাসী জানান, যানজট নিরসনে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বগুড়ায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো সিএনজিচালিত অটোরিকশা, তিন চাকার অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। অবৈধ পার্কিং আর ফুটপাত দখলের কারণে পাঁচ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। ৫ আগস্টের পর পুলিশের কাজে ধীর গতির কারণে এই যানজট আরও তীব্র হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের গা ছাড়া ভাব রয়েছে বলে শহরবাসী অভিযোগ করেছেন।

1

ট্রাফিক পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, জেলা শহরে প্রায় ৮০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল করে। সেইসঙ্গে আছে প্রাইভেট কারের রাজত্ব। নো-পার্কিং অঞ্চলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলে শপিং। হকারদের দাপট ফুটপাত থেকে ধীরে ধীরে চলে গেছে রাস্তায়। শহরের দত্তবাড়ি থেকে ইয়াকুবিয়া মোড় পর্যন্ত ১২০০ মিটার রাস্তা হেঁটে যেখানে ১০ মিনিটে অতিক্রম করা সম্ভব; সেখানে যানজটের কারণে গাড়িতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা। বগুড়ায় যানজটের অন্যতম কারণ শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেললাইন। ২৪ ঘণ্টায় শহরের তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করে ১৬টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। প্রতি বারে সময় লাগে ১৫ মিনিট। এর মধ্যে দিনের আট বারে যায় প্রায় ১২০ মিনিট। এই দুই ঘণ্টা রাস্তার দুই পাশে যে দীর্ঘ যানজট হয় তা ছুটতে লাগে অনেক সময়। এছাড়া শহরের রাস্তাগুলো ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর গত ২০ বছরে আর এক ফুটও প্রশস্ত করা হয়নি। অথচ গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। এর মধ্যে চলাচল করে লাইসেন্স ছাড়া শত শত রিকশা ও অটোরিকশা।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ অন্য সড়কগুলোতেও সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটর সাইকেলের স্ট্যান্ড ও সড়কের দুই পাশ হকার, মৌসুমি ফলের ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরের ভেতরে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটির তোয়াক্কা করছেন না কেউ। সকাল থেকে দিনভর শহরে চলাচল করতে দেখা যায় যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। 

শহরের ঠনঠনিয়া টার্মিনালে বাসের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০টি। সেখানে বাস ঢোকানো হয় গড়ে ৩০টি। সড়কের ওপর গাড়ি ঘোরানো হয়। যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। এত গাড়ি বের হয়েছে যে, তা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

— মো. সালেকুজ্জামান, বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) 

বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য প্যাডেল চালিত ৬ হাজার ২০০ রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কয়েক গুণ বেশি প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এর বাইরে আছে প্রায় ৩০ হাজারের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। প্রতিদিন শহরের রাস্তায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়কে ২৫ থেকে ৩০টি অবৈধ অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলেও অনেক ভবনেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে সড়কের পাশে পার্ক করায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকেই শুরু হয় শহরের এই যানজট। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করে। ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে একঘণ্টা লেগে যায়। বেলা ১০টার পর শহরের গোহাইল রোডের সুত্রাপুর থেকে সাতমাথা, শেরপুর রোডের মফিজ পাগলার মোড় থেকে সাতমাথা, দত্তবাড়ি থেকে সাতমাথা, ফতেহ আলী বাজার থেকে থানা মোড়, বড়গোলা টিনপট্টি, চেলোপাড়া, থানামোড় থেকে বাঁদুরতলা পর্যন্ত তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। 

শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার প্রায় সবগুলো সড়কেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অবৈধ পার্কিং, রাস্তার দুই পাশে বসা দোকানপাটের কারণে ভয়াবহ যানজট শুরু হয়। ফলে ব্যস্ত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে কয়েক দফা যানজটে ঘণ্টারও বেশি সময় চলে যায়। এমনকি, ফুটপাত দখল করে বসা দোকানিদের কারণে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতেও স্বস্তি নেই এই শহরে। টিনপট্টি এলাকায় দিনের বেলায় রড, সিমেন্ট এবং টিনের ট্রাক থেকে মাল লোড, আনলোড করা হয়। এভাবে একের পর এক মালবাহী ট্রাক প্রবেশ করায় দিনের পুরোটা সময়ই যানজট লেগে থাকে টিনপট্টি এলাকায়। 

2

বগুড়ার খান্দার এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার মামনুর রশিদ জানান, 'আমার বাসা থেকে অফিসের যে দূরত্ব তা এক কিলোমিটারও হবে না। রিকশায় অফিসে পৌঁছতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। কিন্তু যানজটের কারণে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের আগে পৌঁছানোই যায় না।' 

পথচারী হাসানুজ্জামান বলেন, 'পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এভাবে একটা শহর চলতে পারে না। প্রচুর কর্মঘণ্টা যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে।'

ব্যবসায়ী আলাল হোসেন বলেন, 'রাস্তায় অনেক সময় চলে যায়। ফুটপাতে হাঁটার মতো কোনো পরিবেশ নেই। প্রশাসন হকারদের অস্থায়ী মার্কেট করে দিয়েছে। ওটা ফাঁকা পড়ে আছে। এরা রাস্তা থেকে সরে না।' 

জানা গেছে, গত বছর আগস্টে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে লাল ও সবুজ রঙে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রতিদিন যে কোনো এক রঙের অটোরিকশা চলাচলের কথা ছিল। আর শহরের ভেতর চলাচলের জন্য ৫ হাজার অটোরিকশাকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়িত হয়নি। 

বগুড়া পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, 'যেহেতু থ্রি- হুইলারের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই, এ কারণে কিছুটা জটিলতা ছিল। কিছু জটিলতার কারণে তা করা যায়নি। 

তিনি বলেন, বগুড়া শহরের যানজট নিরসনে সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে। 

বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. সালেকুজ্জামান বলেন, 'জনবল কম থাকার পরেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।' 

তিনি বলেন, শহরের ঠনঠনিয়া টার্মিনালে বাসের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০টি। সেখানে বাস ঢোকানো হয় গড়ে ৩০টি। সড়কের ওপর গাড়ি ঘোরানো হয়। যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। এত গাড়ি বের হয়েছে যে, তা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। শহর যানজটমুক্ত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। 

টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সভাপতি অধ্যাপক ওসমান গনি বগুড়া শহরের যানজট বিষয়ে বলেন, এই শহর চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি, কিছু গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়া উচিত। এজন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। 

বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. জেদান আল মুসা জানান, বগুড়া শহরে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে তীব্র যানজট লেগে থাকে। আমি নতুন যোগদান করেই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি। পূজার ছুটির পরে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, সুধীজন, মোটর মালিক, অটোরিকশা মালিক, সাংবাদিকসহ সকলকে নিয়ে যৌথসভা করা হবে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে যানজট নিরসনে কাজ করা হবে।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘ডাক্তার দেরিতে’ আসায় হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসাসেবা বন্ধ

news image

আ. লীগ ভবিষ্যতে এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না : নুর

news image

দাওয়াত খেতে গিয়ে মার খেলেন আওয়ামী লীগ নেতা

news image

বিয়ের পর ছাত্রীকে অস্বীকার, পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

news image

বাড়ি থেকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার রগ কাটল দুর্বৃত্তরা

news image

দুই কৃষককে নিয়ে গেল বিএসএফ, দুই ভারতীয়কে আটকে রেখেছে গ্রামবাসী

news image

খাবার চুরি, বি‌য়ে না করেই ফি‌রে যা‌চ্ছিলেন বর

news image

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

news image

শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে

news image

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

news image

মে দিবস: ‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

news image

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

news image

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

news image

জামিনে বের হয়ে জেলগেট থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news image

ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবার আত্মসমর্পণ

news image

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

news image

আওয়ামী লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : নুর

news image

মাটি খুঁড়তেই মিলল অবিস্ফোরিত মর্টার শেল

news image

শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারের পাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সেল

news image

এইচএসসির ফরম পূরণের টাকায় দুই যুবদল নেতাকে অনুদান

news image

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ, সন্তানকে নিয়ে পালালেন স্বামী

news image

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

news image

চাঁদা আদায়কারী সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

news image

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

news image

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

news image

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ

news image

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

news image

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু

news image

গণহত্যাকারী দল আ.লীগকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না : জিলানী

news image

বিএনপিতে সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নাই : শামা ওবায়েদ