বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

নিহত তোফাজ্জলের বাড়িতে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৯ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ০৯:৪৯ পি.এম

নিহত তোফাজ্জলের বাড়িতে শোকের মাতম ছবি: সংগৃহীত

ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে গিয়েছিলেন তোফাজ্জল হোসেন (৩০) নামের ব্যক্তি। চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

পিটিয়ে মারার আগে তোফাজ্জল হোসেনকে ভাত খেতে দেন শিক্ষার্থীরা। তোফাজ্জেল বুঝতে পারেননি এই খাওয়াই তার শেষ খাওয়া। 

প্রেম সংক্রান্ত ব্যাপারে আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন তোফাজ্জল। এর কিছুদিন পরই তোফাজ্জল হোসেনের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। এ কারণে পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন তোফাজ্জল। 

মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এসব তথ্য জানান।

তোফাজ্জল হোসেনের এমন মৃত্যুর খবর শুনে বরগুনার পাথরঘাটার কাঠালতলী ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তোফাজ্জল হোসেন বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

আরিফুজ্জামান আল ইমরান নামের একজন তার সম্পর্কে ফেসবুকে লিখেছেন, তোফাজ্জল আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। তোফাজ্জল হোসেন পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই ছেলেটি বেশ স্বজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অবিভাবকশূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। বিগত ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওরে চিনত সবাই সহযোগিতা করত। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করত। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝেমধ্যে চেয়ে নিত। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোন চাহিদা ছিল না।’

তিনি আরও লেখেন, হয়তো আজকেও খাবারের জন্য ও এফএইচ (ফজলুল হক মুসলিম) হলে গিয়েছিল। আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের ছোট ভাই সাংবাদিক কবির কাননের ফেসবুক ওয়ালে তোফাজ্জলকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেখি যে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে এফএইচ হলে আটক করেছে। আমি দেখামাত্রই ফোন করে তোফাজ্জলের বিষয়ে কাননকে অবগত করি যে, ও আমার এলাকার ছেলে, আমি ওরে ব্যক্তিগতভাবে জানি, বর্তমানে ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। হয়তো খাবারের সন্ধানে তোফাজ্জল এফএইচ হলে গেছে। আমি কালকে বলেছিলাম, তুমি ওখানে যারা এখন ওকে আটকে রেখেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখো, তোফাজ্জল যে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা ওদের অবহিত করো, যাতে ওরে শারীরিকভাবে টর্চার না করে। কানন কিছুক্ষণ পরে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই অরে আর কেউ টর্চার করবে না, তবে আপনি ওর কোনো অভিভাবক কাউকে পাঠান যার কাছে তোফাজ্জলকে দিয়ে দেবে, আমি সেই ব্যবস্থা করতেছি। এরপর আমি আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এফএইচ হলে গিয়ে তাকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি। ২ ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছে

ইমরান আফসোস প্রকাশ করে লেখেন, আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো। তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাওয়ার মতো ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাব।

এদিকে তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আজ সকালে শুনেছি তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আছেন চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

তিনি আরও বলেন, তার বাবা আবদুর রহমান মারা গেছেন ২০১১ সালে, মা বিউটি বেগম মারা যান ২০১৩ সালে এবং ভাই নাসির উদ্দিন পুলিশের এ এসআই ছিলেন, তিনি মারা যান ২০২৩ সালে। মরদেহ আনার পর জানাজা শেষে বাবা মায়ের পাশে দাফন দেওয়া হবে।

তোফাজ্জেলকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তার চাচা ফজলুল হক। 


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

কন্যাসন্তান হওয়ায় মিষ্টির প্যাকেটে ইটের গুঁড়া দিলেন জামাই

news image

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

news image

মাদক কারবারিতে বাধা দেওয়ায় ছেলের হাতে বাবা খুন

news image

হাতিয়ায় বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩৫

news image

রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ, সারাদেশের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ

news image

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুম শেখের মায়ের ইন্তেকাল

news image

মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে গেলেন দুজনে

news image

বড়শিতে ধরা পড়ল সা‌ড়ে ৯ কে‌জির চিতল

news image

ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবীরা

news image

দাম না পেয়ে নদীতে চামড়া ফেলে দেওয়ায় ব্যবসায়ী আটক

news image

হাসপাতাল ঢুকে বৈষম্যবিরোধী নেতাসহ ১০ জনকে পিটুনি

news image

লাচ্ছির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা বাবার

news image

রিলিফের গোশত না পেয়ে খালি হাতে ফিরলেন হতদরিদ্ররা

news image

মাংস নিয়ে বোনের বাড়িতে যাওয়া হলো না ভাইয়ের

news image

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

news image

চুয়াডাঙ্গায় পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত প্রবাসী

news image

‘কালো মানিক’ উপহার হিসেবে নেবেন না খালেদা জিয়া, চেয়েছেন দোয়া

news image

ইতিহাস গড়ল পাবনার ৬৮ শিক্ষার্থী

news image

কেএনএফের পোশাককাণ্ড, এবার আ.লীগ নেতার ভাইসহ আটক ৪

news image

জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা: ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বললো বৈষম্যবিরোধীরা, বিএনপির দুঃখ প্রকাশ

news image

রংপুরে জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা

news image

যারা চোরা পথে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা নির্বাচন চায় না: মঈন খান

news image

ছেলে-মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাস করলেই ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান

news image

চট্টগ্রামে শিবিরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল: রাফি

news image

অনেক বিপদ ও ঝড় ঝাপটা এসেছে, কিন্তু বিএনপিকে ছেড়ে যাইনি: রিতা

news image

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

news image

যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস

news image

মধ্যরাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর ও লুটপাট

news image

মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীর জিম্মায় ছাড়া পেলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

news image

রশনির রক্তমাখা ব্যাগ জড়িয়ে কাঁদছেন মা