শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

বাড়ি যেতে চাইলাম— ছেলে বলল সম্ভব হবে না মা, ওখানেই থাকো

নিজস্ব প্রতিবেদন ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:১০ পি.এম

বাড়ি যেতে চাইলাম— ছেলে বলল সম্ভব হবে না মা, ওখানেই থাকো ছবি: সংগৃহীত

‘কষ্ট লেগেছে, সে কষ্ট চাপা রেখেছি। সবার সামনে তো সবকিছু বলা যায় না। আত্মীয়-স্বজন সবারই মাঝে ঈদ করতাম। একা এখানে ঈদ করলাম। এখানে থেকে সবগুলো রোজা করলাম। ছেলেটাকে বললাম- রোজার এক মাস আমাকে নিয়ে যাও বাড়িতে। সে বলল, নিয়ে আসা সম্ভব হবে না মা, ওখানেই (বৃদ্ধাশ্রম) থাকো। আমি গেলে যদি সংসারে গণ্ডগোল লাগে। সেজন্য আমি আর যেতে চাইলাম না।

 

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ৫০ বছর বয়সী বিলকিস আরা রানী। তিনি ৮ মাস ধরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমারী ইউনিয়নের সাধানপুর গ্রামে ‘বয়স্ক প্রতিবন্ধী নিরাশ্রয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ থাকেন। আর সাধানপুর বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে পঙ্গু নিকেতন।

বিলকিস আরা রানীর বাড়ি রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায়। তার মতো আরও ৯ জন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ এখানে থাকেন।

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। তাই ছেলের বউ আমাকে নিতে রাজি হয়নি। যদি তাদের ফ্যামিলিতে (পরিবার) সমস্যা হয়। বৌমা পুলিশের মেয়ে, যদি কোনো কেস করে দেয়, তাহলে আমার ছেলে গতি থাকবে না। সেজন্য ছেলে আমাকে এখানে (বৃদ্ধাশ্রম) রেখে গেছে। আমার ছেলে ও ছেলের বউ একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করত। তারা দুজনে প্রেম করে বিয়ে করেছে। আমি এটাই মেনে নিয়েছি। এটাও ভালো জায়গা। 

তিনি আরও বলেন, আমি চাই ছেলেরা ভালো থাকুক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করি, সবার জন্য দোয়া করি। এই সেন্টারটির জন্য দোয়া করি। যারা আমাদের পরিচালনা করছে তাদের জন্য দোয়া করি। যারা আমাদের খাবার দিচ্ছে তাদের জন্য দোয়া করি। যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে হাত তুলি তখন সবার জন্যই দোয়া করি। 

সন্তানের জন্য দোয়া করি বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সন্তান হয়তো আজকে এখানে রেখে গেছে। যেদিন তার ভুল ভাঙবে সেদিন সে নিয়ে যাবে। এই আশা নিয়ে আছি। এখনও এই আশা নিয়ে বুক বেঁধে আছি। এই বৃদ্ধাশ্রমে ৮ মাস ধরে আছি। ছেলের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কিন্তু ছেলের বউ ও আড়াই বছরের নাতির সঙ্গে একদিনও কথা হয়নি। স্বামী তো আগেই আলাদা ঘর বেঁধেছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। একটা কোম্পানি থেকে ছেলের চাকরি চলে যাওয়ার পরে বাবা-ছেলে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করছে রাজশাহীতে। আমি সব সময় চাই তারা ভলো থাকুক। 

জীবনে প্রথম এমনভাবে একা একা ঈদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা অনেক খারাপ লেগেছে। নিজে নিজে উপলব্ধি করেছি, এখানে আমার মতো আরও অনেক ভাই-বোন আছে। তারাও তো তাদের জীবনকে মেনে নিয়েছে। তাদের দেখে আমিও মেনে নিয়েছি। কোনো খারাপ লাগে না, ভালোই লাগে এখন। কষ্ট লেগেছে, সে কষ্ট চাপা রেখেছি। সবার সামনে তো সবকিছু বলা যায় না। কষ্ট চেপে রেখেছি। আত্মীয়-স্বজন সবারই মাঝে আজকে ঈদ করতাম। সেখানে আজকে একা এখানে ঈদ করলাম। এখানে থেকে সবগুলো রোজা করলাম। ছেলেটাকে বলেছিলাম- রোজায় এক মাসের জন্য আমাকে নিয়ে যাও বাড়িতে। সে বলল, নিয়ে আসা সম্ভব হবে না মা, ওখানেই থাকো। আমি গেলে যদি সংসারে গণ্ডগোল লাগে। সেজন্য আমি আর যেতে চাইলাম না। আমাদের মতো মায়েরা যেন কোনো সন্তানের কাছে ভারি না হয় বাবা। এটুকুই কামনা করছি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে গোরস্থান পর্যন্ত পৌঁছায়। 

বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ৬৫ বছর বয়সী সুফিয়া বেগম বলেন, একা একা চলি। ব্যাটা নিতে আইছিল। আমি যায়নি। ব্যাটাকে বুলিছি, বাপ তুমি যাও। আমি এখিনে ভালো আছি। আমি যেহেতু এখিনে আছি, তাই গার্জিয়ান হিসেবে খাতাতে নাম লেখতি হিবি (হবে)। তাই ব্যাটা নাম লেখি দি চলি গ্যাছে। আমার ব্যাটারা যেটুক দেখে, বউয়েরা দেখে না। সেই কারণেই এখিনে চলে আইছি। আমার দুই ব্যাটা, দুই বিটি। এক বিটি মরি গেছে। এক বিটি পরের সংসারে থাকে। ব্যাটার বউয়ের অত্যাচারের কারণে মানুষের মুখে মুখে শুনি এখিনে চলি আইছি। এখিনে বাড়ির চ্যাতে (চেয়ে) ভালো আছি। সবাই মিলেমিশে বন্ধু-বান্ধবীর মুতন (মতো) থাকি।

জানা গেছে, সম্প্রতি এ বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে বাগমারার খোকা বাবু ও নাটোরের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারকে খবর দিলে তাদের মরদেহ নিয়ে যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন বৃদ্ধাশ্রমে থাকার পরে নাটোরে ইসমাইল বাসায় ফিরে গেছেন। 

এ বিষয়ে বৃদ্ধাশ্রম দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে বর্তমানে ৯ জন রয়েছেন। ঈদের তাদের উন্নতমানের খাবার দেওয়া হয়েছে। এখানে বিনা খরচে তারা থাকেন। এখানে খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।  

পঙ্গু শিশু নিকেতনের সভাপতি মো. মুরছালাত বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এখানে আমাদের আয়ের কিছু উৎস আছে যেমন পুকুর, ধানি জমি ও বিভিন্ন ফলের গাছ ইত্যাদি। সেই টাকায় কোনো মতো চলে।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বিয়ের পর ছাত্রীকে অস্বীকার, পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

news image

বাড়ি থেকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার রগ কাটল দুর্বৃত্তরা

news image

দুই কৃষককে নিয়ে গেল বিএসএফ, দুই ভারতীয়কে আটকে রেখেছে গ্রামবাসী

news image

খাবার চুরি, বি‌য়ে না করেই ফি‌রে যা‌চ্ছিলেন বর

news image

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

news image

শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে

news image

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

news image

মে দিবস: ‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

news image

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

news image

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

news image

জামিনে বের হয়ে জেলগেট থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news image

ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবার আত্মসমর্পণ

news image

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

news image

আওয়ামী লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : নুর

news image

মাটি খুঁড়তেই মিলল অবিস্ফোরিত মর্টার শেল

news image

শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারের পাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সেল

news image

এইচএসসির ফরম পূরণের টাকায় দুই যুবদল নেতাকে অনুদান

news image

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ, সন্তানকে নিয়ে পালালেন স্বামী

news image

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

news image

চাঁদা আদায়কারী সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

news image

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

news image

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

news image

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ

news image

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

news image

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু

news image

গণহত্যাকারী দল আ.লীগকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না : জিলানী

news image

বিএনপিতে সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নাই : শামা ওবায়েদ

news image

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের সুধী সভার প্রথম সারিতে কৃষক লীগ নেতা

news image

চাঁদাবাজ দখলবাজরা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিল না : রাশেদ

news image

১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে গণপিটুনি