শক্রবার ০২ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদন ০১ মে ২০২৫ ০৫:১৯ পি.এম

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কবে করা যায় তার তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলুন। কোনোভাবে যদি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। সুতরাং ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একত্রে কাজ করতে হবে।
 
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে বরিশাল নগরের সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আমাদের দেশে ১২ কোটি ভোটার। তার মধ্যে শ্রমিক হচ্ছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ। যারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার নির্বাচিত করে, যারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে তারা বঞ্চিত, তারা নির্যাতিত, তারা অসহায়। কথায় কথায় তাদের ছাঁটাই করা হয়, তাদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বিগত ১৫-১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে শ্রমিকরা তাদের সমাবেশ করার, সংগঠিত হওয়ার অধিকার পায়নি। তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়নি শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩-একটি আইন করে শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার অধিকার শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছে। যতটুকু আইন করা হয়েছিল, সেটি করা হয়েছিল মালিকের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে নয়। তাই আজ জুটমিল, চিনিকল, গার্মেন্টস শিল্পসহ প্রতিটি জায়গায় শ্রমিকরা জীবন দিচ্ছে। শেখ হাসিনার আমলে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের বারান্দায় শ্রমিক নেতাদের জীবন দিতে হয়েছে।

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরির জন্য আন্দোলনে শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনী, শেখ হাসিনার র‌্যাব, শেখ হাসিনার পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তারা গুলি চালিয়ে মহিলা শ্রমিক আঞ্জুমান আরা খাতুনকে হত্যা করেছে। শ্রমিক জালাল উদ্দিনকে হত্যা করলো, শ্রমিক রাসেলকে হত্যা করলো। শেখ হাসিনার গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, শুধু জনতা নয়, শ্রমিকদেরও রক্ত গেছে।  সেই রক্তে রচিত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই মহাবিপ্লব। যে আন্দোলনের শতাধিক শ্রমিক শহিদ হয়েছে। 

তিনি বলেন, শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে আমেরিকায় শুধু জীবন দেয়নি, আজও জীবন দিচ্ছে, আজও মারা যাচ্ছে, আজও রক্ত ঝড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের কেউ মূল্যায়ন করি না। আমরা তাদের কেউ খবর রাখি না। দেশের ক্রান্তিকাল এখনো শেষ হয়নি, আজও শ্রমিকদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। আজ তাদের পরিবারে কোনো খাবার নেই, তাদের সন্তানেরা বই খাতা কিনতে না পেরে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কে দেখবে এদেরকে? কে দেখবে এদের পরিবারকে? এমনকি বিগত সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতির কারণে আইটসোর্সিংয়ের নামে স্থায়ী শ্রমিকরাও কর্মঝুঁকিতে পড়ছে।

রিজভী বলেন, বিগত সরকারের গণবিরোধী নীতিমালার কারণে জুটমিলগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আর বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। একই কারণে চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে সিন্ডিকেট ছিল, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনেক টাকা গুনতে হতো। এর মধ্যে ছিল মাসুদ, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল আরও অনেক লোক। এই সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমিকদের কষ্ট হতো। শ্রমিকরা ঘর-জমি বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েও চাকরি পেত না। আজ তো সিন্ডিকেট থাকার কথা নয়, আজ কেন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করবে। কেন আজ তারা অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটাবে? আজ তো ফ্যাসিবাদ নেই, আজ তো সেই জুলুম নেই, তাহলে কেন আজ শ্রমিক ছাঁটাই হবে?

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসরদের পাপের বিচার হোক, কিন্তু তাদের মিল-কলকারখানা বন্ধ না করে প্রশাসক নিয়োগ করে সেগুলো সচল রাখুন। কোনো শ্রমিকের চাকরি যেন না যায়, কোনো শ্রমিক তার কর্মসংস্থান না হারায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনের ফসল ড. ইউনূস সাহেবের সরকার। তাকে তো জনগণ যেখানে ভালো থাকবে, জনগণ যেভাবে চাল, ডাল, তেল কিনতে পারবে, জনগণ যেভাবে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, চিনি, লবণ কিনতে পারবে সেই ধরনের পরিস্থিতি-পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু যদি ড. ইউনূসের সরকার শুধু ছাঁটাই করেন, বেকারত্ব বৃদ্ধি করেন, কর্মসংস্থান শূন্য করেন তাহলে তো জনগণের আস্থা থাকবে না এই সরকারের প্রতি। আপনাকে জনগণের দিকে মনযোগ দিতে হবে।  

তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি মানবতার করিডোর দিতে চান বার্মার রাখাইন রাজ্যে, যেখানে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। আপনি জনগণের কী আকাঙ্খা সেটি শুনবেন না। আপনি রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে, যাদের ছেলেরা অদৃশ্য হয়ে গেছে, খুনের শিকার হয়েছে, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের কথা আপনি শুনবেন না। আপনি এককভাবে আপনার কয়েকজন অ্যাডভাইজার নিয়ে মানবতার করিডোর করবেন। সেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা কোন জায়গায় যাবে সেটি জনগণের কাছে পরিষ্কার না করে  আপনি করিডোর দিতে চাচ্ছেন। আপনি নির্বাচিত নন, কিন্তু আপনি তো জনগণের ও রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার। এজন্য আপনাকে জনগণের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যেখানে দেশ ও দেশের মানুষ বিপন্ন হতে পারে সেই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দুঃখজনক।

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় পালিয়ে আছে? পার্শবর্তী দেশে। কিন্তু কোথায় আছে? সে কথা ওখানকার প্রধানমন্ত্রীও বলে না, আর কেউও বলে না। শেখ হাসিনা হয়ে গেছে ওসামা বিন লাদেনের খালাতো বোন। ওসামা বিন লাদেন কোন গুহায়, কোন পাহাড়ে থাকতো কেউ যেমন জানে না, মাঝে মাঝে ভিডিও বার্তা দিত। ঠিক সেইভাবে শেখ হাসিনা এখন লাদেনের খালাতো বোন হয়ে ভিডিও বার্তা দেন। উনার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, যে ঘটনায় উনি বলেছেন ২২৭টি হত্যা নিশ্চিত হল। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা যার ফ্যাক্ট চেকিং করেছে, ফরেনসিক করে দেখেছে এটা সত্য এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য।

তিনি বলেন, যিনি কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কীভাবে বলতে পারেন যারা তার নামে মামলা দিয়েছে সেই ২২৭ জনের হত্যা নিশ্চিত হলো। তিনি হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আপনি এত শিশু, কিশোর, শ্রমিক, রিকশাওয়লার রক্ত পান করার পরও আপনার তৃষ্ণা মেটেনি। এত হত্যা, গুম, খুনের পরে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আপনি তাদের জীবন কেরে নিতে চাইছেন।

মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য দেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কুদ্দুসুর রহমান,  নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, ওবায়দুল হক চান,  আবু নাসের মহম্মদ রহমাতুল্লাহ, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, জেলা সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন প্রমুখ। 

সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে সমাবেশে যোগ দেয়।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বিয়ের পর ছাত্রীকে অস্বীকার, পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

news image

বাড়ি থেকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার রগ কাটল দুর্বৃত্তরা

news image

দুই কৃষককে নিয়ে গেল বিএসএফ, দুই ভারতীয়কে আটকে রেখেছে গ্রামবাসী

news image

খাবার চুরি, বি‌য়ে না করেই ফি‌রে যা‌চ্ছিলেন বর

news image

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

news image

শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে

news image

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

news image

মে দিবস: ‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

news image

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

news image

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

news image

জামিনে বের হয়ে জেলগেট থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news image

ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবার আত্মসমর্পণ

news image

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

news image

আওয়ামী লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : নুর

news image

মাটি খুঁড়তেই মিলল অবিস্ফোরিত মর্টার শেল

news image

শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারের পাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সেল

news image

এইচএসসির ফরম পূরণের টাকায় দুই যুবদল নেতাকে অনুদান

news image

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ, সন্তানকে নিয়ে পালালেন স্বামী

news image

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

news image

চাঁদা আদায়কারী সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

news image

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

news image

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

news image

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ

news image

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

news image

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু

news image

গণহত্যাকারী দল আ.লীগকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না : জিলানী

news image

বিএনপিতে সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নাই : শামা ওবায়েদ

news image

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের সুধী সভার প্রথম সারিতে কৃষক লীগ নেতা

news image

চাঁদাবাজ দখলবাজরা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিল না : রাশেদ

news image

১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে গণপিটুনি