বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রায়হান পেলেন জিপিএ-৫, অঝোরে কাঁদছেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৬ অক্টোবার ২০২৪ ০৬:৫২ পি.এম

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রায়হান পেলেন জিপিএ-৫, অঝোরে কাঁদছেন মা ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশীদের কাছে ভালো ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিলেন আবু রায়হান। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল, ছেলে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সেই আশা অধরাই রয়ে গেল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে নিহত হন আবু রায়হান। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে তার এইচএসসি পরীক্ষার ফল। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেও সেটি এখন মূল্যহীন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষায় অংশ নেন রায়হান। গতকাল প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ছেলের ভালো ফলাফলের খবর শুনে আনন্দের বদলে কেবল অঝোরে কাঁদছেন মা রাহেনা বেগম। 

আবু রায়হানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে যান আবু রায়হান। ওই দিন পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরদিন ৫ আগস্ট বিকালে পৌর শহরের ছিট চিলারং এলাকায় সাবেক কমিশনার একরামুদৌলার বাড়িতে আরও সঙ্গীদের সঙ্গে মীমাংসার জন্য যান আবু রায়হান। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত গ্যাস সিলিন্ডারে দেওয়া আগুনে ঝলসে গুরুতর আহত হন আবু রায়হানসহ চারজন। এরপর রংপুর থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবু রায়হান। এ ঘটনায় একে একে পুড়ে যাওয়া চারজনই মারা যান।

ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদছেন মা রাহেনা বেগম। ছবি: ইত্তেফাক

আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও ১ ও ২ আসনের সাবেক এমপিসহ ৯১ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ঠাকুরগাঁও ১ আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সাবেক এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজন ও সুজনের বাবা সাবেক এমপি দবিরুল ইসলামেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, রায়হান খুব ভালো ছেলে ছিলেন। তার জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুশি তারা। কিন্তু এই খুশির কোনো মূল্য নেই।

রায়হানের এক সহপাঠী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি, ঘুরেছি। কখনও সে খারাপ আচরণ করেনি।’ 

আবু রায়হানের মা রাহেনা বেগম বলেন, ‘৪ তারিখেও (আগস্ট) আন্দোলনে গিয়েছিলো রায়হান। ওই দিন ওর শরীরে একটা গুলিও লেগেছিল। সেই দিনের কিছু ভিডিও মোবাইলে নিয়ে এসেছিলো। আমরা জানতাম না ওর গুলি লেগেছে। রাতে ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। খুব আদরের সন্তান রায়হান। ৫ তারিখ (আগস্ট) বললাম, বাবা খারাপ লাগছে। ও বলল- না মা। এভাবে সে সারা দিন বাসায় ছিল। বিকালবেলা আমাদের এলাকার আশপাশের ছেলেরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, ওইটা দেখার জন্য রায়হানও যায়। সাহেদ কমিশনারের ওখানে আরও কয়েকজন ছেলে যায়। পাশাপাশি সেও (রায়হান) যায়। আমি শুনেছি ওইখানে নাকি সিলিন্ডার সেট করা ছিল এবং মুখগুলো খুলে রাখা ছিল। মুখ খোলার পর ওরাই (কমিশনারের লোকজন) আগুন দিয়ে দেয়। আগুনে সে পুড়ে যায়। এরপর ঠাকুরগাঁও নিয়ে গেল, সেখান থেকে রংপুর নিয়ে গেল, রংপুর থেকে ঢাকায়। সেখানে ছিল পাঁচ দিন। তারপর আমার বাবুটা আর নাই।’

ছেলেকে নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে রাহেনা বেগম বলেন, ‘কত যে আশা ছিল এই ছেলেটাকে নিয়ে। সে মানুষের মতো মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে। একটাই ছেলে আমার, আর ওর বাবা অসুস্থ, আর আমরা তো প্রায় অচল হয়ে গেছি। আমাদের কে দেখাশোনা করবে! ওই ছেলেটা আমাদের অবলম্বন ছিল। ছেলেটা বড় হয়ে চাকরি করবে, আমাদের দেখবে, কিন্তু....। আমাদের এখন কে দেখবে?’ এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাহেনা বেগম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কালকে রেজাল্ট বের হইছে। এত বড় একটা রেজাল্ট পাইছে, জিপিএ-৫ পাইছে। কত যে খুশি হইতো ছেলেটা আমার। এখন আনন্দের বদলে শুধু কান্না পাচ্ছে। আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি হোক।’


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

কন্যাসন্তান হওয়ায় মিষ্টির প্যাকেটে ইটের গুঁড়া দিলেন জামাই

news image

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

news image

মাদক কারবারিতে বাধা দেওয়ায় ছেলের হাতে বাবা খুন

news image

হাতিয়ায় বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩৫

news image

রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ, সারাদেশের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ

news image

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুম শেখের মায়ের ইন্তেকাল

news image

মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে গেলেন দুজনে

news image

বড়শিতে ধরা পড়ল সা‌ড়ে ৯ কে‌জির চিতল

news image

ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবীরা

news image

দাম না পেয়ে নদীতে চামড়া ফেলে দেওয়ায় ব্যবসায়ী আটক

news image

হাসপাতাল ঢুকে বৈষম্যবিরোধী নেতাসহ ১০ জনকে পিটুনি

news image

লাচ্ছির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা বাবার

news image

রিলিফের গোশত না পেয়ে খালি হাতে ফিরলেন হতদরিদ্ররা

news image

মাংস নিয়ে বোনের বাড়িতে যাওয়া হলো না ভাইয়ের

news image

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

news image

চুয়াডাঙ্গায় পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত প্রবাসী

news image

‘কালো মানিক’ উপহার হিসেবে নেবেন না খালেদা জিয়া, চেয়েছেন দোয়া

news image

ইতিহাস গড়ল পাবনার ৬৮ শিক্ষার্থী

news image

কেএনএফের পোশাককাণ্ড, এবার আ.লীগ নেতার ভাইসহ আটক ৪

news image

জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা: ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বললো বৈষম্যবিরোধীরা, বিএনপির দুঃখ প্রকাশ

news image

রংপুরে জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা

news image

যারা চোরা পথে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা নির্বাচন চায় না: মঈন খান

news image

ছেলে-মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাস করলেই ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান

news image

চট্টগ্রামে শিবিরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল: রাফি

news image

অনেক বিপদ ও ঝড় ঝাপটা এসেছে, কিন্তু বিএনপিকে ছেড়ে যাইনি: রিতা

news image

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

news image

যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস

news image

মধ্যরাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর ও লুটপাট

news image

মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীর জিম্মায় ছাড়া পেলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

news image

রশনির রক্তমাখা ব্যাগ জড়িয়ে কাঁদছেন মা