শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রায়হান পেলেন জিপিএ-৫, অঝোরে কাঁদছেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৬ অক্টোবার ২০২৪ ০৬:৫২ পি.এম

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রায়হান পেলেন জিপিএ-৫, অঝোরে কাঁদছেন মা ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশীদের কাছে ভালো ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিলেন আবু রায়হান। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল, ছেলে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সেই আশা অধরাই রয়ে গেল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে নিহত হন আবু রায়হান। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে তার এইচএসসি পরীক্ষার ফল। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেও সেটি এখন মূল্যহীন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে এইচএসসি (আলিম) পরীক্ষায় অংশ নেন রায়হান। গতকাল প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু ছেলের ভালো ফলাফলের খবর শুনে আনন্দের বদলে কেবল অঝোরে কাঁদছেন মা রাহেনা বেগম। 

আবু রায়হানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে যান আবু রায়হান। ওই দিন পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরদিন ৫ আগস্ট বিকালে পৌর শহরের ছিট চিলারং এলাকায় সাবেক কমিশনার একরামুদৌলার বাড়িতে আরও সঙ্গীদের সঙ্গে মীমাংসার জন্য যান আবু রায়হান। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত গ্যাস সিলিন্ডারে দেওয়া আগুনে ঝলসে গুরুতর আহত হন আবু রায়হানসহ চারজন। এরপর রংপুর থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবু রায়হান। এ ঘটনায় একে একে পুড়ে যাওয়া চারজনই মারা যান।

ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদছেন মা রাহেনা বেগম। ছবি: ইত্তেফাক

আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও ১ ও ২ আসনের সাবেক এমপিসহ ৯১ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ঠাকুরগাঁও ১ আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সাবেক এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজন ও সুজনের বাবা সাবেক এমপি দবিরুল ইসলামেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, রায়হান খুব ভালো ছেলে ছিলেন। তার জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুশি তারা। কিন্তু এই খুশির কোনো মূল্য নেই।

রায়হানের এক সহপাঠী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি, ঘুরেছি। কখনও সে খারাপ আচরণ করেনি।’ 

আবু রায়হানের মা রাহেনা বেগম বলেন, ‘৪ তারিখেও (আগস্ট) আন্দোলনে গিয়েছিলো রায়হান। ওই দিন ওর শরীরে একটা গুলিও লেগেছিল। সেই দিনের কিছু ভিডিও মোবাইলে নিয়ে এসেছিলো। আমরা জানতাম না ওর গুলি লেগেছে। রাতে ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। খুব আদরের সন্তান রায়হান। ৫ তারিখ (আগস্ট) বললাম, বাবা খারাপ লাগছে। ও বলল- না মা। এভাবে সে সারা দিন বাসায় ছিল। বিকালবেলা আমাদের এলাকার আশপাশের ছেলেরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, ওইটা দেখার জন্য রায়হানও যায়। সাহেদ কমিশনারের ওখানে আরও কয়েকজন ছেলে যায়। পাশাপাশি সেও (রায়হান) যায়। আমি শুনেছি ওইখানে নাকি সিলিন্ডার সেট করা ছিল এবং মুখগুলো খুলে রাখা ছিল। মুখ খোলার পর ওরাই (কমিশনারের লোকজন) আগুন দিয়ে দেয়। আগুনে সে পুড়ে যায়। এরপর ঠাকুরগাঁও নিয়ে গেল, সেখান থেকে রংপুর নিয়ে গেল, রংপুর থেকে ঢাকায়। সেখানে ছিল পাঁচ দিন। তারপর আমার বাবুটা আর নাই।’

ছেলেকে নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে রাহেনা বেগম বলেন, ‘কত যে আশা ছিল এই ছেলেটাকে নিয়ে। সে মানুষের মতো মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে। একটাই ছেলে আমার, আর ওর বাবা অসুস্থ, আর আমরা তো প্রায় অচল হয়ে গেছি। আমাদের কে দেখাশোনা করবে! ওই ছেলেটা আমাদের অবলম্বন ছিল। ছেলেটা বড় হয়ে চাকরি করবে, আমাদের দেখবে, কিন্তু....। আমাদের এখন কে দেখবে?’ এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাহেনা বেগম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কালকে রেজাল্ট বের হইছে। এত বড় একটা রেজাল্ট পাইছে, জিপিএ-৫ পাইছে। কত যে খুশি হইতো ছেলেটা আমার। এখন আনন্দের বদলে শুধু কান্না পাচ্ছে। আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি হোক।’


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

খুলনায় মহিলা দল নেত্রীকে পেটালেন নারীকর্মীরা

news image

শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি মিছিল

news image

‘ডাক্তার দেরিতে’ আসায় হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসাসেবা বন্ধ

news image

আ. লীগ ভবিষ্যতে এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না : নুর

news image

দাওয়াত খেতে গিয়ে মার খেলেন আওয়ামী লীগ নেতা

news image

বিয়ের পর ছাত্রীকে অস্বীকার, পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

news image

বাড়ি থেকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার রগ কাটল দুর্বৃত্তরা

news image

দুই কৃষককে নিয়ে গেল বিএসএফ, দুই ভারতীয়কে আটকে রেখেছে গ্রামবাসী

news image

খাবার চুরি, বি‌য়ে না করেই ফি‌রে যা‌চ্ছিলেন বর

news image

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

news image

শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে

news image

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

news image

মে দিবস: ‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

news image

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

news image

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

news image

জামিনে বের হয়ে জেলগেট থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news image

ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবার আত্মসমর্পণ

news image

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

news image

আওয়ামী লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : নুর

news image

মাটি খুঁড়তেই মিলল অবিস্ফোরিত মর্টার শেল

news image

শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারের পাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সেল

news image

এইচএসসির ফরম পূরণের টাকায় দুই যুবদল নেতাকে অনুদান

news image

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ, সন্তানকে নিয়ে পালালেন স্বামী

news image

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

news image

চাঁদা আদায়কারী সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

news image

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

news image

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

news image

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ

news image

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

news image

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু