শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ফিচার

বাঘের ভুলে পিঁপড়ার বন

হাফিজুর রহমান ০২ অক্টোবার ২০২৪ ০১:৫৮ পি.এম

বাঘের ভুলে পিঁপড়ার বন ছবি: সংগৃহীত

“আচ্ছা দাদু, আমাদের এখানে তো একটাই বিশাল বড় আয়তনের বন। যে বনের অধিকাংশ গাছই তো শালগাছ। তাহলে এই বনের নাম তো শালবন বা শাল বাগান হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা না হয়ে ‘পিঁপড়ার বন’ নাম হয়েছে কেন? যেকোনো বনে তো মানুষজন ঘুরে বেড়াতে যায়, ওখানে যায় না কেন? কীসের ভয়ে যায় না? দাদির কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, বলতে পারেনি, তুমি কি জানো?”

হাসতে হাসতে দাদু বলে, ‘জানি তো, জানব না কেন? ছোট্টবেলায় ওই বনের অনেক গল্প শুনেছি। অত্র এলাকার এটিই সবচেয়ে বড় বন, অসংখ্য গল্প আছে এই বনকে ঘিরে। আমি ওই সময়টা নিজ চোখে দেখিনি, তবে শুনেছি ওখানে একসময় কয়েক জাতের বাঘ ছিল। এক সাংঘাতিক রকমের ঘটনায় খাবারের অভাবে, না খেতে পেয়ে বাঘগুলো মরতে-মরতে শেষ হয়ে গেছে।’

‘তাই নাকি’? বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে ডালিম।

“বলো না দাদু, আমি শুনতে চাই সেই ‘পিঁপড়ার বনের’ গল্প। কী কারণে খাবারের অভাবে, না খেতে পেয়ে মরে গিয়েছিল বাঘগুলো আর বাঘ মরার সঙ্গেই পিঁপড়ারই বা কী সম্পর্ক? আমি জানতে চাই দাদু।”

পা তুলে বিছানায় আরাম করে বসে বলল দাদু, তবে শোনো, কেন ওই বন ‘পিঁপড়ার বন’ হলো তার গল্প।

সে অনেক দিন আগের কথা, আমারও জন্মের অনেক আগে। ওই বনে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর বসবাস ছিল। বন জুড়ে ছিল পাখপাখালিদের আনাগোনা, মুখরিত ছিল কলরবে।

‘আচ্ছা দাদু, তুমি না বললে তোমারও জন্মের অনেক আগের কথা, তাহলে তুমি এসব জানলে কী করে?’

‘এই যে তুমি যেভাবে আমার মাধ্যমে জানতে চাইছো, সেভাবে আমিও ছোটবেলায় আমাদের এলাকার প্রবীণ মানুষগুলোর কাছে থেকে জেনে নিয়েছি।’

‘ও, তাই বলো! বেশ দাদু, তারপর বলো কী হয়েছিল?’

খুব মনোযোগ সহকারে আগ্রহ ভরে দাদুর মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ডালিম।

‘শোনো, বনে যতগুলো প্রাণী ছিল, ওদের রাজা ছিল বাঘ। তবে এই রাজা নির্বাচনের বিষয়টি ছিল একটু ব্যতিক্রম। সাধারণত অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের ও জ্ঞানীগুণীদের মধ্য থেকে রাজা নির্বাচনের প্রচলন থাকলেও এই বনের নিয়মকানুন ছিল একটু অন্যরকম। সেখানে বিবাহ উপযুক্ত বাঘদের মধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি কোনো রাগী বাঘকে রাজা নির্বাচন করা হতো। এর মূল কারণ হলো, ওদের ধারণা রাজা যদি বদমেজাজের খুব রাগী হয়, তাহলে বাইরের শত্রুদের আক্রমণ থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা যাবে। রাজার ভয়ে বাইরের কোনো জীবজন্তু, এমনকি মানুষ পর্যন্ত বনের ধারের কাছে আসতে ভয় পাবে।’

নড়েচড়ে ভালো মতো বসে ডালিম বলে, ‘বলো দাদু, তারপর কী হলো’?

‘এক সময় ওই বনের জীবজন্তুগুলো এমন এক বাঘকে রাজা বানিয়েছিল, যে শুধু বদমেজাজেরই ছিল না, অত্যাচারীও ছিল! অন্য প্রাণীদের শুধু শাসনই করত না শোষণও করত! বাঘ ছাড়াও বনে হরিণ, খরগোশ, শিয়াল, বনবিড়াল ইত্যাদি প্রাণীর বসবাস ছিল। অত্যাচারী রাজা, অন্য জীবজন্তুদের ধরে এনে ওদের বুক ফেঁড়ে কলিজা খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। মাংস খেত না, শুধু কলিজাটুকু ছিঁড়ে খেত, অবশিষ্ট পুরো দেহটা পড়ে থাকত, যা বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলত। শুধু কলিজা খেয়ে বেঁচে থাকত বলে এক রাজার জন্যই প্রতিদিন চার-পাঁচটা প্রাণীর জীবননাশ হতো।

এ অন্যায়ের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল, কিন্তু রাজার স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি। ফলে বাঘ ছাড়া অন্য জীবজন্তুগুলো বন ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল।’

খুব মনোযোগ সহকারে দাদুর গল্প শুনছিল ডালিম। মায়ের ডাকে নীরবতা ভাঙে, কিছুটা বিরক্তির স্বরে গলা উঁচিয়ে জবাব দেয়, ‘একটু পরে আসছি মা’।

‘বাকিটুকু পরে বলব, মা খেতে ডাকছে যাও এখন।’

‘না দাদু, একটু পরেই যাই। তুমি বলো তারপর কী হয়েছিল?’

নাতির পীড়াপীড়িতে দাদু বলতে থাকে, ‘তারপর আর কী হবে, যা হওয়ার তাই হলো। অত্যাচারী রাজার আফসোসের সীমা রইল না। একসময় যেগুলো না খেয়ে ফেলে দিত, এখন এর থেকেও বাজে খাবার জোটে না। ওদের শিকার হওয়ার মতো আর কোনো প্রাণীই রইল না বনে। সেই কারণে একসময় কঠিন খাদ্য সংকটে পড়ল। শুনেছি কিছু বাঘ, পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে, নিজেদের দেহের মাংস নিজেরাই ছিঁড়ে খেত! শেষ পর্যন্ত জীর্ণশীর্ণ হয়ে এক এক করে সব বাঘ মরে পড়েছিল বনে।’

‘তারপর?’

‘ওই মৃত বাঘগুলোকে খেতে দূরদূরান্ত থেকে অজস্র পিঁপড়া এসেছিল। তখন থেকে পিঁপড়ার দখলে পুরো বন। লাল পিঁপড়ার কামড়ের ভয়ে বনে কেউ বেড়াতে যায় না, আর সেই কারণেই ওই বনের নাম হয়েছে পিঁপড়ার বন। এক সময় যে বনে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর পদচারণায় প্রাণ ঝলমল করত, বিভিন্ন ধরনের পাখপাখালিদের আনাগোনায় মুখরিত ছিলÑ সেই বন নিশ্চুপ, বলা যায় প্রায় প্রাণহীন হয়ে গেল।’

‘বুঝেছি!’

‘কী বুঝলে?’

‘বুঝলাম কারও ওপর অত্যাচার করলে নিজেও টিকে থাকা যায় না। অন্যকে ধ্বংস করতে গেলে দুদিন পরে নিজেও ধ্বংস হয়ে যেতে হয়।’

‘বাহ, দাদুভাই! তুমি তো দারুণ কথা বললে!’

‘হয়েছে, এখন চলো! মা ডাকছে।’


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

রবিন রাফানের এআই মাস্টারক্লাসে অভূতপূর্ব সাড়া, দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা

news image

যেভাবে অনলাইনে ভাইরাল হওয়া কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো

news image

ঈদ সালামি থেকে ঈদী: সংস্কৃতির বিবর্তন

news image

সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো মসজিদ

news image

শিশু সাহিত্যের ধ্রুবতারা শিবুকান্তি দাশ

news image

জনতার কন্ঠস্বর

news image

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ

news image

স্কুলের দেওয়াল যেন প্রজাপতির পাখা

news image

সান্তা ক্লজ আছেন বাস্তবেই, থাকেন কোথায় জানেন?

news image

শীতে পরিযায়ী পাখিরা কীভাবে সহস্র মাইল পথ চিনে যায়-আসে?

news image

শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভার পরামর্শ

news image

শীতে প্রকৃতি উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন  গ্রাম থেকে

news image

কৃষিকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া জিহাদ এখন ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করেন

news image

ঈশান হতে অগ্নি

news image

কুমড়ার নৌকায় ৭৩ কিমি. পাড়ি দিয়ে রেকর্ড

news image

বিশ্বের বৃহত্তম বন্দী কুমিরের মৃত্যু

news image

বাংলাদেশের যে গ্রামে বাস করেন মাত্র ৪ জন

news image

টি অ্যান্ড টেলস: এক অনন্য সাহিত্য বিকেল

news image

যে ৭ আচরণ দেখে স্বার্থপর ব্যক্তি চিনবেন

news image

যেসব দেশে মুসলিমদের বসবাস বা ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ!

news image

ফ্রিল্যান্সিং এ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা

news image

শিশুকে যৌন নির্যাতন : ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

news image

আপনার স্ত্রীকে যে কথাগুলো কখনোই বলবেন না

news image

ইউরোপীয় ইস্তাম্বুলে কয়েকদিন

news image

অভিভাকদের যেসব কাজে নষ্ট হয় শিশুর আত্মবিশ্বাস

news image

কক্সবাজারে সমুদ্রস্নানে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস

news image

শরৎ বন্দনা

news image

আত্মবিশ্বাসী হওয়া দরকার

news image

ফ্লেমিংগো একটি পাখির নাম

news image

পানির ওপর ৩৩ কিমি. বাইক চালিয়ে বিশ্বরেকর্ড!