মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
রাজনীতি

জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপিকে নিয়ে ভারত কী ভাবছে ?

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৩৭ এ.এম

জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপিকে নিয়ে ভারত কী ভাবছে ? ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, তারা বাংলাদেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই রেখেছে’- মানে শুধু একটি দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ছিল, আর সেটা আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপিকে নিয়ে ভারতের যে কোনও কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।

দিল্লির নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন- অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভাল ছিল না। দু’পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী। যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায়। কিন্তু তাই বলে তাদের ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনও যুক্তি নেই।

২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রথমবারের মতো ভারতের ক্ষমতায় আসে, বিএনপির তরফে সম্পর্কের এই শীতলতা দূর করার একটা সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সম্ভবত বিএনপির ধারণা ছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ঐতিহাসিক একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের শাসনের অবসানের পর দক্ষিণপন্থী বিজেপির সঙ্গে বিএনপির মধ্যে একটা নতুন সমীকরণের সূচনা হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে তাতে দিল্লির দিক থেকে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া মিললেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্কও সেভাবে গড়ে উঠেনি। উল্টোদিকে প্রায় রেকর্ড সময়ের মধ্যে জমাট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদী আর শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ বা ব্যক্তিগত রসায়ন, মজবুত হয়েছে দুই সরকারের সম্পর্ক। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থনের ঘটনাও দিল্লির প্রতি বিএনপির অবিশ্বাসকে বদ্ধমূল করেছে।

কিন্তু ২০২৪-র ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে গেছে, সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে একটা বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করেছে।

দিল্লির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই। কারণ আওয়ামী লীগের চট করে রাজনৈতিক কামব্যাকের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে। তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, বিএনপির সঙ্গে ভারতের এতকাল কোনো যোগাযোগ ছিল না, এই কথাটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন এটা একটা ভুল ধারণা! এই ধারণাটা তৈরি হওয়ার কারণ আওয়ামী লীগ একটা খুব লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল। তো ওই পুরো সময়টা আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট লেভেলে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ডিল করব, তাই না? তার মানে এই না যে, অন্য কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা ডিল করতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না! বরং ভালোই ছিল।

তিনি বলেন, আমি নিজে হাইকমিশনার হিসেবে অনেকবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি, বহুবার তাদের বলেছি যে আপনারা ক্ল্যারিফাই করুন। এরকম কনভার্সেশন আমাদের অনেক হয়েছে। এছাড়া সেখানকার তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের যে ডেলিগেশন ভারতে আসত, তাতে বিরোধী দল ও বিএনপির এমপিরা সব সময় থাকতেন। কাজেই এটা বলা ভুল, আমরা ওদের সঙ্গে কথাই বলতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না। তবে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যে ঠিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, এ কথাটা দু’দেশে সকলেই জানেন ও মানেন।

বিজেপির সিনিয়র নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান শমীক ভট্টাচার্যর বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক, বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মানুষ যাকে চাইবে সেই দেশে, আমরা তাকে বেছে নেবে। কিন্তু মৌলবাদ থেকে সরতে হবে।

এদিকে জামায়াত-ই-ইসলামী বিএনপির সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। আর এই কারণে দিল্লির এখন একটা সম্পর্ক স্থাপনের ভাল সুযোগ বলে মনে করছেন ভারতের কূটনীতিকরা।

এই বিষয়ে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, ডেফিনিটলি জামায়াত আর বিএনপির মতবিরোধগুলো এখন খুব স্পষ্ট। ওনাদের একজন বড় নেতা এটাও বলেছেন যে কোনও অ্যালায়েন্স হওয়া সম্ভব না। আমি নিশ্চিত, এই ডেভেলপমেন্টগুলো ভারত সরকার নিজেদের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং অ্যাসেস করছে।

জামায়াতের ইসলামীর ব্যাপারে বিজেপির এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা স্পষ্টতই জামাতের চিন্তাভাবনা, তালেবানেইজেশনের কনসেপ্টের ঘোরতর নিন্দা করি। এটার বিরোধিতা আমরা করছি এবং করেও যাবো।

তিনি আরও বলেন, ভারতের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা এখনও একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে তাদের যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ‘শর্ত’ হতে হবে; জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সঙ্গ তাদের ত্যাগ করতেই হবে।

অন্যদিকে বিএনপি ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় অস্বস্তির জায়গাটা হল ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা। 

ভারত বিশ্বাস করে, ওই সময় আলফাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢালাও আশ্রয় পেয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলফার জন্য ট্রাকে করে অস্ত্র পাচারের ঘটনাও এই সময়কারই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি আবার মনে করেন, নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে বিএনপির সেই পুরনো রেকর্ড ‘অবশ্যই বদলাতে পারে’ এবং ভারতও তখন উপযুক্ত সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।

এছাড়া ভারতের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি বাংলাদেশে ‘প্রশ্রয়’ না পায়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বহাল থাকে। তাহলে বিএনপির সঙ্গে ‘ডিল’ করতেও ভারতের কোনও সমস্যা নেই।

এইদিকে নির্বাচন নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক; ভারত নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না। যদিও করে তাহলে অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।

এই মুহুর্তে ভারতের কৌশলটাই- বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে চাপ দেওয়া এবং তাতে যারাই জিতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ তৈরির পথ প্রস্তুত করে রাখা।

বিজেপির রাজ্যসভা এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তার বেশি থাকবে। এটাই কাঙ্ক্ষিত ও এটা হওয়াই স্বাভাবিক।

সোর্স/বিবিসি বাংলা

তথ্য সুত্র: ইত্তেফাক


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নগরভবনে বিরতিহীন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন ইশরাক

news image

ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি

news image

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে নিঝুম দ্বীপ হবে মালদ্বীপ’

news image

‘মায়ের সঙ্গে ঈদ করছেন জয়, কিন্তু লাখ লাখ নেতাকর্মী পরিবারছাড়া’

news image

গোটা জাতি লন্ডনের দিকে তাকিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সিদ্ধান্ত: রিজভী

news image

এক সপ্তাহে ১৩ লাখ টাকা গণচাঁদা সংগ্রহ এনসিপির

news image

খালেদা জিয়ার এক পরামর্শেই বদলে গেল রাজনৈতিক দৃশ্যপট

news image

ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকে কী কী আলোচনা হতে পারে, জানালেন প্রেস সচিব

news image

তরুণ ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে: জামায়াত আমির

news image

নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ ঘোষণাপত্র দিতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

news image

অন্য কোনো দেশ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করুক, এটা কাম্য নয়: জামায়াত আমির

news image

গুম ও শহীদ পরিবারকে তারেক রহমানের ঈদ উপহার

news image

বুলু ও দুদুকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করল বিএনপি

news image

জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে এই সাংবাদিকরাই হাসিনার কদমবুচি করতো: হাসনাত

news image

লন্ডন যাচ্ছেন আজ, রাজনীতি নিয়ে এখনই ভাবছেন না ডা. জুবাইদা

news image

তাজউদ্দীনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয় কিভাবে? সারজিসের পোস্ট

news image

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শেখ মুজিব মাঠে ছিলেন না : সারজিস

news image

মোস্তফা জামাল হায়দারের সুস্থতায় দোয়া চাইলেন রাশেদ প্রধান

news image

প্রধান উপদেষ্টা জবাব দেন না, মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় করে দেন: মান্না

news image

নির্বাচনি রোডম্যাপ দিতে দেরি হলে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে

news image

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অনুপস্থিতিতে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত : মঈন খান

news image

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা দেরি হলে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে: মির্জা ফখরুল

news image

বিদেশী এজেন্টদের আমরা চিহ্নিত করে ফেলেছি: ইশরাক

news image

আমাদের ওপর মনঃক্ষুণ্ন হবেন না, প্রধান উপদেষ্টাকে সালাহউদ্দিন

news image

আন্দোলনে জীবন দেয় একজন, স্যুটেড-বুটেড হয়ে ক্ষমতায় বসে আরেকজন: রিজভী

news image

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে সীমা অতিক্রম না করতে হুশিয়ারি: আব্দুল মোনায়েম মুন্না

news image

সংস্কার নিয়ে অস্পষ্টতা দূর করতে হবে: চরমোনাই পীর

news image

উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্রদের রাখা বিরাট ভুল হয়েছে: মেজর (অব.) হাফিজ

news image

‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে একক দলের ভাবা উচিত নয়’

news image

ছাত্রদল সভাপতির পদ হারানোর খবরটি ভুয়া: সাধারণ সম্পাদক নাছির