বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

আলমারি-টেবিল এখনো গুছিয়ে রাখছেন মা, কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না

নিজস্ব প্রতিবেদন ২৭ নভেম্বার ২০২৪ ১১:২৯ এ.এম

আলমারি-টেবিল এখনো গুছিয়ে রাখছেন মা, কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না ছবি: সংগৃহীত

পাসপোর্ট করা হয়েছে। কাগজপত্রও প্রায় প্রস্তুত। উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান যাওয়ার কথা ছিল শোভনের। কিন্তু তার আর জাপান যাওয়া হলো না। ছেলেটার ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষে চাকরি করে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করার। তার আগেই শোভনকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হলো।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম ছোট মসজিদ এলাকার ৩নং রোডের ভাড়া বাসায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান শোভনের মা শাহনাজ বেগম। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কলেজ ছাত্র শহিদুল ইসলাম শোভন (১৯)।

শাহনাজ বেগম বলেন, সেদিন ছিল ১৯ জুলাই শুক্রবার। শোভন দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে এসে বিরিয়ানি খাচ্ছিল। ওর বন্ধুরা তখন বারবার ফোন দিচ্ছিল সবাই মিলে আন্দোলনে যাবে। ছেলেটা আমার তাড়াহুড়া করে খেয়ে চলে গেল। আমি কি জানতাম ওটাই আমার ছেলের শেষ খাওয়া, এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা?

শহিদুল ইসলাম শোভন গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন। ২০ জুলাই শনিবার বিকেলে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় হাফিজি হুজুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী শোভন এ বছর শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

গেলাম হাসপাতালে। দেখলাম জরুরি বিভাগের এক পাশে একটা ট্রলিতে আমার ছেলেটা পড়ে আছে। কয়েকটা ছেলে ওর পাশে দাঁড়ানো। শোভনের কাছে দৌড়ে গেলাম। আমার ছেলের দেহ নিথর। কত্ত ঝাঁকুনি দিলাম, কতবার ডাকলাম, ছেলে কিছু বলে না। একটা কথাও বললো না।

তিনি বলেন, ছেলে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে মারা যাওয়ায় ভয় হচ্ছিল, যদি পুলিশ লাশ নিয়ে যায়। যদি আমাদের অ্যারেস্ট করে! তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাড়াহুড়া করে আমার ভাইদের আর ওর বন্ধুদের সহয়তায় কোনোমতে জোর করেই হাসপাতাল থেকে ছেলেকে নিয়ে আসলাম।

ছেলের স্মৃতিচারণ করে শোভনের মা বলেন, কয়েক বছর আগের এক ২১ ফেব্রুয়ারি। শোভন তখন ক্লাস সেভেনে বা এইটে পড়ে। সেদিন শোভন একটা পোস্টার বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। ওই পোস্টারটিতে ছিল পাঁচজন ভাষা শহীদ : সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার-এর ছবি, শহীদ মিনারের আঁকা একটা ছবি আর ছিল শোভনের নিজের ছবি। সময়ের পরিক্রমায় সেই পোস্টারের সব চরিত্র আজ এক, তারা সবাই শহীদ। দেশের জন্য সবাই রাজপথে জীবন দিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা শোভনের শাহাদাত নির্ধারিত করে রেখেছিলেন বলেই কি ওই পোস্টারের সব চরিত্র এক হয়ে গেল!

কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন, আমরা তো জানতাম না আমার ছেলের দেশের প্রতি এই রকম ভালোবাসা ছিল। ও যে নিজেই দেশের জন্য পোস্টারের আরেকজন শহীদ হয়ে গেল! শোভন মারা যাওয়ার পর ওর ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমরা এ পোস্টারটি দেখি, তবে কি শোভন এমনভাবেই শহীদ হতে চেয়েছিল কিংবা সৃষ্টিকর্তা শোভনের ভাগ্যে আগেই শাহাদাত লিখে রেখেছিল?

শোভনের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করতে সরকারের প্রতি দাবি রেখে মা শাহানাজ বেগম বলেন, যেখানেই হোক (ঢাকা অথবা মুন্সীগঞ্জ) ওর নামে যেন একটা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যেখানে সবাই নামাজ পড়ে আমার ছেলেসহ সব শহীদের জন্য দোয়া করবে।

নিহতদের শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাদের সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। শুধু মুখে মুখে শহীদ বললেই হবে না। এদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। এরা তো দেশের জন্যই জীবন দিয়েছে।

বোরহানউদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শোভন খুব সাহসী ছিল। সে আমাদের জাতীয় বীর। শোভনের মতো তরুণদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই এ দেশের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আমরা এ জাতীয় বীরদের অবদান ভুলব না। শোভনের স্মরণে চাঁনখার পুল চত্বরকে ‘শোভন চত্বর’ নামকরণ করা হয়েছে। শোভন সবার জন্য এক অনুকরণীয় চরিত্র।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

কন্যাসন্তান হওয়ায় মিষ্টির প্যাকেটে ইটের গুঁড়া দিলেন জামাই

news image

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

news image

মাদক কারবারিতে বাধা দেওয়ায় ছেলের হাতে বাবা খুন

news image

হাতিয়ায় বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩৫

news image

রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ, সারাদেশের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ

news image

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুম শেখের মায়ের ইন্তেকাল

news image

মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে গেলেন দুজনে

news image

বড়শিতে ধরা পড়ল সা‌ড়ে ৯ কে‌জির চিতল

news image

ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবীরা

news image

দাম না পেয়ে নদীতে চামড়া ফেলে দেওয়ায় ব্যবসায়ী আটক

news image

হাসপাতাল ঢুকে বৈষম্যবিরোধী নেতাসহ ১০ জনকে পিটুনি

news image

লাচ্ছির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা বাবার

news image

রিলিফের গোশত না পেয়ে খালি হাতে ফিরলেন হতদরিদ্ররা

news image

মাংস নিয়ে বোনের বাড়িতে যাওয়া হলো না ভাইয়ের

news image

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

news image

চুয়াডাঙ্গায় পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত প্রবাসী

news image

‘কালো মানিক’ উপহার হিসেবে নেবেন না খালেদা জিয়া, চেয়েছেন দোয়া

news image

ইতিহাস গড়ল পাবনার ৬৮ শিক্ষার্থী

news image

কেএনএফের পোশাককাণ্ড, এবার আ.লীগ নেতার ভাইসহ আটক ৪

news image

জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা: ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বললো বৈষম্যবিরোধীরা, বিএনপির দুঃখ প্রকাশ

news image

রংপুরে জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা

news image

যারা চোরা পথে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা নির্বাচন চায় না: মঈন খান

news image

ছেলে-মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাস করলেই ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান

news image

চট্টগ্রামে শিবিরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল: রাফি

news image

অনেক বিপদ ও ঝড় ঝাপটা এসেছে, কিন্তু বিএনপিকে ছেড়ে যাইনি: রিতা

news image

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

news image

যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস

news image

মধ্যরাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর ও লুটপাট

news image

মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীর জিম্মায় ছাড়া পেলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী

news image

রশনির রক্তমাখা ব্যাগ জড়িয়ে কাঁদছেন মা