শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

আলমারি-টেবিল এখনো গুছিয়ে রাখছেন মা, কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না

নিজস্ব প্রতিবেদন ২৭ নভেম্বার ২০২৪ ১১:২৯ এ.এম

আলমারি-টেবিল এখনো গুছিয়ে রাখছেন মা, কিন্তু ছেলে যে আর ফিরবে না ছবি: সংগৃহীত

পাসপোর্ট করা হয়েছে। কাগজপত্রও প্রায় প্রস্তুত। উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান যাওয়ার কথা ছিল শোভনের। কিন্তু তার আর জাপান যাওয়া হলো না। ছেলেটার ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষে চাকরি করে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করার। তার আগেই শোভনকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হলো।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম ছোট মসজিদ এলাকার ৩নং রোডের ভাড়া বাসায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান শোভনের মা শাহনাজ বেগম। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কলেজ ছাত্র শহিদুল ইসলাম শোভন (১৯)।

শাহনাজ বেগম বলেন, সেদিন ছিল ১৯ জুলাই শুক্রবার। শোভন দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে এসে বিরিয়ানি খাচ্ছিল। ওর বন্ধুরা তখন বারবার ফোন দিচ্ছিল সবাই মিলে আন্দোলনে যাবে। ছেলেটা আমার তাড়াহুড়া করে খেয়ে চলে গেল। আমি কি জানতাম ওটাই আমার ছেলের শেষ খাওয়া, এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা?

শহিদুল ইসলাম শোভন গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন। ২০ জুলাই শনিবার বিকেলে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় হাফিজি হুজুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী শোভন এ বছর শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

গেলাম হাসপাতালে। দেখলাম জরুরি বিভাগের এক পাশে একটা ট্রলিতে আমার ছেলেটা পড়ে আছে। কয়েকটা ছেলে ওর পাশে দাঁড়ানো। শোভনের কাছে দৌড়ে গেলাম। আমার ছেলের দেহ নিথর। কত্ত ঝাঁকুনি দিলাম, কতবার ডাকলাম, ছেলে কিছু বলে না। একটা কথাও বললো না।

তিনি বলেন, ছেলে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে মারা যাওয়ায় ভয় হচ্ছিল, যদি পুলিশ লাশ নিয়ে যায়। যদি আমাদের অ্যারেস্ট করে! তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাড়াহুড়া করে আমার ভাইদের আর ওর বন্ধুদের সহয়তায় কোনোমতে জোর করেই হাসপাতাল থেকে ছেলেকে নিয়ে আসলাম।

ছেলের স্মৃতিচারণ করে শোভনের মা বলেন, কয়েক বছর আগের এক ২১ ফেব্রুয়ারি। শোভন তখন ক্লাস সেভেনে বা এইটে পড়ে। সেদিন শোভন একটা পোস্টার বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিল। ওই পোস্টারটিতে ছিল পাঁচজন ভাষা শহীদ : সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার-এর ছবি, শহীদ মিনারের আঁকা একটা ছবি আর ছিল শোভনের নিজের ছবি। সময়ের পরিক্রমায় সেই পোস্টারের সব চরিত্র আজ এক, তারা সবাই শহীদ। দেশের জন্য সবাই রাজপথে জীবন দিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা শোভনের শাহাদাত নির্ধারিত করে রেখেছিলেন বলেই কি ওই পোস্টারের সব চরিত্র এক হয়ে গেল!

কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন, আমরা তো জানতাম না আমার ছেলের দেশের প্রতি এই রকম ভালোবাসা ছিল। ও যে নিজেই দেশের জন্য পোস্টারের আরেকজন শহীদ হয়ে গেল! শোভন মারা যাওয়ার পর ওর ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমরা এ পোস্টারটি দেখি, তবে কি শোভন এমনভাবেই শহীদ হতে চেয়েছিল কিংবা সৃষ্টিকর্তা শোভনের ভাগ্যে আগেই শাহাদাত লিখে রেখেছিল?

শোভনের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করতে সরকারের প্রতি দাবি রেখে মা শাহানাজ বেগম বলেন, যেখানেই হোক (ঢাকা অথবা মুন্সীগঞ্জ) ওর নামে যেন একটা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যেখানে সবাই নামাজ পড়ে আমার ছেলেসহ সব শহীদের জন্য দোয়া করবে।

নিহতদের শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাদের সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। শুধু মুখে মুখে শহীদ বললেই হবে না। এদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। এরা তো দেশের জন্যই জীবন দিয়েছে।

বোরহানউদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শোভন খুব সাহসী ছিল। সে আমাদের জাতীয় বীর। শোভনের মতো তরুণদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই এ দেশের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আমরা এ জাতীয় বীরদের অবদান ভুলব না। শোভনের স্মরণে চাঁনখার পুল চত্বরকে ‘শোভন চত্বর’ নামকরণ করা হয়েছে। শোভন সবার জন্য এক অনুকরণীয় চরিত্র।


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘ডাক্তার দেরিতে’ আসায় হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসাসেবা বন্ধ

news image

আ. লীগ ভবিষ্যতে এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না : নুর

news image

দাওয়াত খেতে গিয়ে মার খেলেন আওয়ামী লীগ নেতা

news image

বিয়ের পর ছাত্রীকে অস্বীকার, পলাতক প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

news image

বাড়ি থেকে ডেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার রগ কাটল দুর্বৃত্তরা

news image

দুই কৃষককে নিয়ে গেল বিএসএফ, দুই ভারতীয়কে আটকে রেখেছে গ্রামবাসী

news image

খাবার চুরি, বি‌য়ে না করেই ফি‌রে যা‌চ্ছিলেন বর

news image

যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা

news image

শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে

news image

জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন : রিজভী

news image

মে দিবস: ‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

news image

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, প্রশংসায় ভাসছেন সাদেক আলী

news image

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

news image

জামিনে বের হয়ে জেলগেট থেকে আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news image

ছেলেকে হত্যা করে থানায় বাবার আত্মসমর্পণ

news image

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

news image

আওয়ামী লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : নুর

news image

মাটি খুঁড়তেই মিলল অবিস্ফোরিত মর্টার শেল

news image

শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারের পাশে বিএনপির স্বাস্থ্য সেল

news image

এইচএসসির ফরম পূরণের টাকায় দুই যুবদল নেতাকে অনুদান

news image

হাসপাতালে স্ত্রীর মরদেহ, সন্তানকে নিয়ে পালালেন স্বামী

news image

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

news image

চাঁদা আদায়কারী সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

news image

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হলে সে হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নিত না: রিজভী

news image

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

news image

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ

news image

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

news image

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু

news image

গণহত্যাকারী দল আ.লীগকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না : জিলানী

news image

বিএনপিতে সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নাই : শামা ওবায়েদ