শক্রবার ০২ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ধর্ম

হজরত ওমরের কথার পর যেসব আয়াত নাজিল হয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২০ এ.এম

হজরত ওমরের কথার পর যেসব আয়াত নাজিল হয়েছিল ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা কুরআনে আয়াত নাযিল করার আগেই তার সঙ্গে সাযুজ্য চিন্তা-ভাবনা যাদের মনে সঞ্চার করেছিলেন, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। 

কুরআনের প্রতি ছিল তার অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসা। কুরআনের ঐশ্বরিক আকর্ষণেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ওমর রা. ছিলেন প্রকৃত কুরআনপ্রেমী। তিনি কুরআন কারীমের অনেক বড় বড় খেদমত করেছেন।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমর রা. সম্পর্কে বলেছিলেন– আল্লাহ তাআলা ওমরের যবানে সত্য ঢেলে দেন, সে তাই বলে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৯৬২)

কুরআনের প্রতি ওমর রা.-এর সীমাহীন মহব্বত ও ভালবাসার বদৌলতেই আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে এমন সব কথা ঢেলে দিতেন, যেটা স্বয়ং কুরআনের কথা। আল্লাহর মর্জি ও সন্তুষ্টির কথা। ফলে পরবর্তীতে সে বার্তা নিয়েই কিছু আয়াত নাযিল হয়েছে।

ওমর রা. নিজেই তার সেই সৌভাগ্য হাসিলের বর্ণনা দিয়েছেন। আমরা এখানে তার সেই বর্ণনা হুবহু তুলে ধরছি। 

ওমর রা. বলেছেন– তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আমার রবের ওহীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা যদি ‘মাকামে ইবরাহীম’কে নামাজের স্থান বানাতে পারতাম। 

তখন এই আয়াত নাযিল হয়–

وَ اتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرٰهٖمَ مُصَلًّی.

তোমরা ‘মাকামে ইবরাহীম’কে নামাযের স্থান বানাও। –সূরা বাকারা (০২) : ১২৫

(দ্বিতীয় হল,) পর্দার আয়াত। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি যদি আপনার স্ত্রীদেরকে পর্দার আদেশ করতেন। কারণ, ভালো-মন্দ সবাই তাদের সঙ্গে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। 

(তৃতীয়) আরেকবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ নবীজীর ওপর অভিমানবশত পরস্পর একতাবদ্ধ হয়েছিল। তখন আমি তাদেরকে বলেছিলাম, রাসূল যদি তোমাদেরকে তালাক দেন, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের পরিবর্তে রাসূলকে তোমাদের চেয়েও উত্তম স্ত্রী দান করবেন। পরবর্তীতে সে কথাই আয়াত হিসেবে নাযিল হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৪০২)

আরেক বর্ণনায় ওমর রা. বদর যুদ্ধবন্দিদের ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি ছিল এরকম, বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলার সাহায্যে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে। কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। তাদের ৭০ জন লোক মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। এ বন্দিদের ব্যাপারে কী ফয়সালা হবে– সে বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। 

আবু বকর রা. বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তাদের থেকে মুক্তিপণ নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। অপরদিকে ওমর রা. কাফেরদেরকে হত্যা করে ফেলার অভিমত ব্যক্ত করলেন। 

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা.-এর পরামর্শ অনুযায়ী ফয়সালা করলেন। পরবর্তীতে ওমর রা.-এর মতামতকে সমর্থন করে কুরআন কারীমে আয়াত নাযিল হল। 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন– ভূপৃষ্ঠে ব্যাপকভাবে শত্রুনিধন না হওয়া পর্যন্ত কোনো নবীর জন্য শত্রুদের বন্দি হিসেবে রেখে দেওয়া সমীচীন নয়। তোমরা চাও পার্থিব সম্পদ আর আল্লাহ চান আখেরাতের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি প্রজ্ঞাবান। আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, তার জন্য তোমাদের ওপর মহা শাস্তি আপতিত হত। অতএব এখন তোমরা যা গনীমত লাভ করেছ, তা বৈধ এবং কল্যাণকর হিসেবে গ্রহণ করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। –সূরা আনফাল (০৮) : ৬৭-৬৯ (দ্র. সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৭৬৩)

আরেকবারের ঘটনা। সেই ঘটনার বিবরণও ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. নিজেই শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, (মুনাফিক সর্দার) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল যখন মারা যায়, তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাজার নামাজের জন্য ডাকা হল। রাসূল জানাজার জন্য উঠে দাঁড়ালে আমি দ্রুত গিয়ে রাসূলকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি ইবনে উবাইয়ের জানাযা পড়বেন, অথচ সে অমুক অমুক দিন এটা এটা বলেছে? আমি রাসূলকে তার উক্তিগুলো একে একে শোনাতে লাগলাম। 

রাসূল মুচকি হেসে বললেন, ওমর, সরে যাও। কিন্তু আমি বারবার আপত্তি করতে থাকলে রাসূল একপর্যায়ে বললেন, আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি যদি জানতাম যে, সত্তরবারের অধিক ইস্তিগফার করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, তবে আমি তাই করতাম। 

এরপর রাসূল তার জানাজার নামায আদায় করে ফিরে এলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সূরা বারাআর দুটি আয়াত নাযিল হল–

وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمْ عَلٰی قَبْرِهٖ  اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ مَاتُوْا وَ هُمْ فٰسِقُوْنَ.

মুনাফিকদের কেউ মারা গেলে তুমি কখনোই তাদের জানাযার নামায আদায় করবে না। তারা তো আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে এবং পাপিষ্ঠ অবস্থায় মারা গেছে। –সূরা তাওবা (০৯) : ৮৪

ওমর রা. বলেন, পরবর্তীতে আমি রাসূলের সামনে আমার সেদিনকার দুঃসাহসিক আচরণের জন্য নিজের প্রতি আশ্চর্যবোধ করছিলাম। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই সবচেয়ে ভালো জানেন। –সহিহ বুখারী, হাদিস ১৩৬৬

এছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রসঙ্গে ওমর রা.-এর চিন্তা ও বক্তব্যের সাথে কুরআনের আয়াত মিলে গিয়েছিল। এজন্য রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমর রা. সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন– তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। আমার এই উম্মতের মধ্যে যদি কেউ থাকে, তবে সে ওমর ইবনুল খাত্তাব। –সহিহ বুখারী, হাদিস ৩৪৬৯

আরও খবর

news image

নবীদের সুন্নত যে চারটি কাজ

news image

হজরত ওমরের কথার পর যেসব আয়াত নাজিল হয়েছিল

news image

বায়তুল মুকাদ্দাসের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন যে নবীর মা

news image

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য যেসব আমল করতে পারেন

news image

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের দোয়া

news image

যে ধরনের অক্ষমতায় রোজার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়া যায়

news image

রোজা রেখে মিথ্যা বললে যে ক্ষতি হবে

news image

রমজানে দুর্ব্যবহার মুক্ত থাকতে হাদিসে যা বলা হয়েছে

news image

রমজানের ফজিলত ও বরকত নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

news image

মৃত্যুর পর শিশুরা কি জান্নাতে যায়?

news image

সারাদিন শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া

news image

যে নফল নামাজগুলো আল্লাহর প্রিয়

news image

তিন তাসবিহ কী? পড়লে যে ফজিলত

news image

জান্নাত ও জাহান্নাম দেখার পর মানুষের যে অনুভূতি হবে

news image

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আরও বাড়লো

news image

শাম অঞ্চলে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে যে সাহাবিরা শহিদ হয়েছেন

news image

শাম অঞ্চলে রাসূল (সা.) এর যুগে যে দুই যুদ্ধ হয়েছিল

news image

কাজা নামাজ পড়ার সময় কিরাত জোরে পড়া যাবে?

news image

সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়েছিল যেভাবে

news image

ফরজ গোসল দেরিতে করা কি ঠিক?

news image

যে তাকবির ধ্বনিতে আনন্দ প্রকাশ করছেন সিরিয়ানরা

news image

আল্লাহর প্রশংসামূলক বিশেষ কিছু বাক্য

news image

দেনমোহর নির্ধারণ না করেই স্বামী মারা গেলে করণীয়

news image

নারীদের আতর-সুগন্ধি ব্যবহার নিয়ে ইসলাম যা বলে

news image

নামাজের পর মসজিদ বন্ধ রাখা কি ঠিক?

news image

পবিত্র কাবা ঘরের ভেতর দেখতে কেমন? কী আছে সেখানে?

news image

শুকনো কাপড়ে অপবিত্র ভেজা কাপড় লাগলে করণীয়

news image

বিজয় আমাদেরই হবে ইনশাআল্লাহ: আজহারী

news image

সম্পদ ও জ্ঞানের সঠিক ব্যবহারকারী সম্পর্কে যা বলেছেন প্রিয়নবী সা.

news image

পাপী বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন