রবিবার ০৪ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ঢাকা যেন পারিবারিক সম্পত্তি ছিল মেয়রদের

নিজস্ব প্রতিবেদন ২৬ অক্টোবার ২০২৪ ১১:১১ এ.এম

ঢাকা যেন পারিবারিক সম্পত্তি ছিল মেয়রদের ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর দুই নগর ভবনের খাতা-কলমে ঢাকা এখন তিলোত্তমা নগরী। বাস্তবে দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। উন্নয়নের নামে খানাখন্দে ভরপুর রাস্তাঘাট। খাল, খাসজমি দখল করে বড় বড় ভবন নির্মাণ। গত দেড় দশকে মেয়ররা ঢাকাকে ব্যবহার করেছেন পারিবারিক সম্পত্তির মতো। আত্মীয়স্বজনের অবাধ চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি কাজের নামে লুটপাট, উন্নয়ন কাজে কমিশন, নিয়োগ-বাণিজ্যের মতো ঘটনা ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। নগর ভবনের কর্তা মেয়ররা জনগণের ট্যাক্সের টাকা নিয়েও করেছেন নানা ছেলেখেলা। উদ্ভট উদ্ভট ধারণা নিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য বেছে নিতেন রাজধানীকে। এমন নানা বাহানায় বছর বছর শত শত কোটি টাকা গচ্চা গেলেও জবাবদিহি ছিল না। মশানিধন, যানজট নিরসন, ট্রাফিক আধুনিকায়ন, সৌন্দর্যবর্ধনে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েও গচ্চা দিয়েছেন অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা। তবে এসব প্রকল্প থেকে মেয়র এবং তাদের স্বজন হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। গত দেড় দশকে রাজধানী বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ওপরের দিকে উঠলেও ভাগ্য বদলেছে দায়িত্ব পালন করা মেয়র এবং তাদের স্বজনের।

শেখ ফজলে নূর তাপস: ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে দায়িত্ব নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত করেন। নিজের আধিপত্য বিস্তারে অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত করেন তিনি। মেয়র থাকাকালে তার স্বৈরাচারী শাসন, শোষণ, অপকর্ম ও দুর্নীতি নিয়ে টুঁ শব্দটি করার সাহস পাননি কেউ। মন্ত্রীদের অনেককেও ধমক দিয়ে, তাচ্ছিল্য করে কথা বলতেন। সরকারি অন্য দপ্তরের প্রধানদের হুমকি দিতেন প্রায়ই।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বলেন, শেখ তাপসের আচরণ ছিল স্বৈরাচারী ও হিংসাত্মক। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেসব বন্ধ করে দেন তাপস। অনেক মার্কেটের উন্নয়ন কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এতে সিটি করপোরেশনের কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাপসের হুকুম ছাড়া করপোরেশনের কোনো কাজই হতো না। দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ থেকে শুরু করে টেন্ডার, দোকান বরাদ্দ, উন্নয়ন প্রকল্প, উচ্ছেদ অভিযান—যাই ঘটুক, সব কিছুতেই তার অনুমতি লাগত। অনেক ফাইল প্রধান নির্বাহী পর্যন্ত গেলেই নিষ্পত্তি হওয়ার কথা; কিন্তু তিনি সেটা মানতেন না। শ্রমিক নিয়োগের তালিকায়ও তার পছন্দের বাইরে কাউকে রাখতেন না। শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস দেখাতেন না কেউ। দক্ষিণ সিটিতে ছিল তাপসের রাজার শাসন।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী মো. শরিফ হোসেন বলেন, মেয়র তাপস টাকা খেয়ে অনেক লোকের চাকরি দিয়েছেন। তিনি সবসময় হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করতেন। আগের মেয়র সাঈদ খোকন দক্ষ-অদক্ষ লোক হিসেবে ১ হাজার ২৭০ জনকে চাকরি দিয়েছিলেন। মেয়র তাপস আসার পর শুধু সাঈদ খোকন চাকরি দেওয়ার কারণে ৯০০ লোকের চাকরি খেয়ে ফেলেন। পরে নিজে ৪০০ লোকের চাকরি দিয়েছেন। শরিফ বলেন, স্থায়ী ৪৪ জনের চাকরিও খেয়েছেন তাপস। নিজে সরাসরি কোনো টাকা লেনদেন না করলেও তার মূল কাজ করে দিতেন সচিব আকরামুজ্জামান। ঠিকাদারি কাজের পার্সেন্টেজ লেনদেন হতো সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের মাধ্যমে। আশিক দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। সবসময় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বসে লেনদেন করতেন।

তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মধুমতি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ডিএসসিসি। ব্যাংকটির অন্যতম বড় শেয়ারহোল্ডার তাপস। ডিএসসিসির আর্থিক ফান্ড, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সব ধরনের লেনদেন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। ডিএসসিসির স্থায়ী আমানত ৫০০ কোটি টাকা এফডিআর হিসেবে মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। চার খাল সংস্কার প্রকল্পের ৮৭৬ কোটি, শাহবাগ শিশু পার্কের উন্নয়ন কাজের ৬০৩ কোটিসহ কয়েকটি প্রকল্পের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকটিতে জমা রয়েছে।

হস্তক্ষেপ ছিল। মেয়র সাঈদ খোকনের বন্ধু পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। তাদের দাপটে কাজ পেতেন না সাধারণ ঠিকাদাররা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নোয়াব এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুল ইসলাম বিপ্লব কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের নেতা। একই থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন জিহান কনস্ট্রাকশন ও এইচপিজে ঠিকাদারি ফার্মের মালিক জসিমউদ্দিন সবুজ। এ দুই ঠিকাদার কয়েকশ কোটি টাকার কাজ করেছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার জেএসএমসিডব্লিউ বিডি কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে করপোরেশনের নতুন চার ইউনিয়নে উন্নয়ন প্রকল্প, ত্রিমুখী প্রকল্প, ফাইভ জোন প্রজেক্ট, ফ্লাইওভারের নিচে বিশেষ প্রকল্পসহ আনুমানিক দেড়শ থেকে দুইশ কোটি টাকার কাজ করেছেন। খোকনকে ম্যানেজ করে সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন অন্তত ৩০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন।

ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে। আট উদ্যোক্তা পরিচালককে সরিয়ে স্ত্রী, বোন, ভগ্নিপতিসহ পরিবারের ৮ সদস্যকে করেছেন এর পরিচালক। এভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন বলে বিতাড়িত পরিচালকরা অভিযোগ করেছেন।

ডিএসসিসির সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি সাঈদ খোকন ২০১২ সালে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আগের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। দীর্ঘ ১২ বছর নির্বাচন ছাড়াই বেআইনিভাবে তিনি এ পদে বহাল থেকে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়েছেন।

এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন কোম্পানির সিইও মো. আব্দুল খালেক মিয়া, সিএফও মো. মঈনুল আহছান চৌধুরী (সোনার বাংলা ও তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স থেকে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বহিষ্কৃত) এবং কোম্পানি সচিব চৌধুরী এহসানুল হক। সাঈদ খোকন কোনো নির্বাচন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চাচা মো. ইসমাইল নওয়াবকে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন। সেখানে কোনো কমিটিও গঠন করা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতার কারণে যা করা হয়েছে, তা হয়েছে শুধু কাগজে-কলমে এবং চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের নির্দেশনায়।

মেয়র হওয়ার আগে সাঈদ খোকনের বার্ষিক আয় ছিল ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। গত সংসদ নির্বাচনের আগে তা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। হলফনামা অনুযায়ী, ৮ বছরের ব্যবধানে তার আয় বেড়েছে ২৭ গুণের বেশি।

আরও খবর

news image

‘ফেরেশতা এলেও কয়েক মাসে দেশটা ঠিক করতে পারবে না’

news image

আবারও রাস্তায় ছাত্র আন্দোলনে ভাইরাল হওয়া সেই রিকশাচালক

news image

বাংলাদেশিকে ধরতে এসে পা ধরে মাফ চাইলো বিএসএফ

news image

অবৈধ সম্পদ: সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের নামে মামলা

news image

শেখ রেহানার স্বামী-দেবরসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

news image

নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব পুলিশের ও আমাদের

news image

ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর : আইন উপদেষ্টা

news image

জাতীয় সনদ তৈরিতে সবার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে : আলী রীয়াজ

news image

এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ

news image

এবার গরমে লোডশেডিং সীমিত পর্যায়ে রাখতে চাই : জ্বালানি উপদেষ্টা

news image

‘দেশের জন্য ভাবতে হবে জুলাই যোদ্ধাদের মতো’

news image

সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমের বিষয়ে দুদককে তদন্তের অনুরোধ উপদেষ্টা আসিফের

news image

শাহরিয়ারের ২৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, লেনদেন ২৬১ কোটি

news image

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় অস্ট্রেলিয়া

news image

বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

news image

বাংলাদেশকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

news image

অবশেষে সরানো হচ্ছে কুয়েটের উপাচার্যকে

news image

মে মাসেই দেশে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা শুরুর আশা

news image

হাসিনার আমলে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে : আইন উপদেষ্টা

news image

পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ : ড. ইউনূস

news image

হাসিনাসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের ‘এনআইডি লক’

news image

প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন আজ

news image

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

news image

‘ক্যাবিনেট মিটিংয়ে ওদের মতামতটা খুব তীক্ষ্ণ হয়’

news image

ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঝটিকা মিছিলকারীদের, জানালো পুলিশ

news image

আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন

news image

‘আমাদের মধ্যে বিশাল আঞ্চলিক বাজার রয়েছে, এটি কাজে লাগানো উচিত’

news image

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

news image

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু

news image

‘তারেক রহমান আসছে’ স্লোগানে মুখর ঢাকার আদালতপাড়া